জান্নাতকে উদ্দেশ্য করেই করুন সব কাজ
মোঃ আলমগীর হোসেন
আমরা কেন ভালো থাকি! কেনইবা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করি! একটু ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করলেই দেখা যায় কোনকিছু পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা, আশা বা সুনির্দিষ্ট কোন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই আমরা বেঁচে থাকি বা ভালো থাকি । যেমন চাকুরীজীবী মানুষেরা পরিশ্রম করে মাস শেষে বেতন ও অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য, ছাত্র-পছাত্রীরা পড়াশোনা করে বছর শেষে ভালো ফলাফলের জন্য । আবার কৃষক ফসল আবাদ করেন, পরিচর্যা ও যত্ন করেন মৌসুম শেষে সুন্দর ফসল ঘরে তোলার জন্য । অনেকে দিনভর পরিশ্রম করেন নির্মল ঘুম ও অন্যের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য । এভাবেই কিছু একটা হবে, কিছু একটা করব বা অন্যজনের মুখে হাসি ফুটানোর কারণ হবো, এই চিন্তা বা আশাতেই আমাদের এতো পরিশ্রম । এই যে কিছু একটা পাবার যে উদ্দেশ্য এটাই আমাদের ব্যস্ত রাখে এবং কিছু একটা পাবো বলেই আমাদের মধ্যে সুখানুভুতির জন্ম হয় । যেটা মূলত আমাদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জোগায় এবং আরও ভালো থাকার সপ্ন দেখায় । আবার কোন কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে পরিশ্রম করে সেটা না পাওয়া গেলে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি । জীবনের অর্থ খুঁজতে থাকি । যদিও আশেপাশে তাকালেই দেখা যায় জীবন অনেক অর্থবহ, জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত অনেক সুন্দর । এখন আমরা যখন কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আগাই সেখান থেকে সফলতা বা ব্যর্থতা আসতেই পারে যদিনা সেটাকে সফল করার জন্য আমরা পর্যাপ্ত পরিশ্রম না করি । কেননা পৃথিবীতে আল্লাহ্ তায়ালা মানুষকে যে সক্ষমতা প্রদান করেছেন তার মধ্যে ভালো-মন্দের ইচ্ছা শক্তি ও সেই ইচ্ছাকে সফল করতে পারার চেষ্টা অন্যতম । তাহলে আমরা কোন কিছুতে সফল হবো কিনা তার অনেকাংশেই নির্ভর করে আমাদের ইচ্ছা শক্তি ও পরিশ্রমের উপর । সুতরাং কোন কিছুতে ব্যর্থ হলে বা আমাদের মনগড়া সময় মতো কিছু না পেলে, হতাশ না হয়ে লক্ষ্যকে আরো বড় করে সামনে আগানোর চেষ্টা করতে হবে । দেখবেন লক্ষ্যহীন মানুষেরা বেশি হতাশাগ্রস্থ হয়ে যায় । যাদের অধিকাংশই জীবনকে অর্থহীন মনে করে । পরিণতিতে আত্মহননের পথ বেছে নিতেও তারা দ্বিধা করে না ।
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে তাহলে আমাদের জীবনের যে ব্যাপ্তি তার পুরোটা সময়কে কিভাবে সুখের মজ্জায় সাজাতে পারি! সেটা করতে হলে আমাদের জীবনের যে চূড়ান্ত লক্ষ্য সেটা নির্ধারণ করতে হবে সর্বশেষ এবং সর্বময় সুখের স্থান জান্নাতকে । কারণ আমাদের এতো অস্থরতা, ছুটে চলে তার সবই বিন্দু পরিমাণ সূখের জন্য । আর জান্নাত হলো চির-শান্তির স্থান যেখানে সবকিছুই সুন্দর ও আকর্ষণীয় বস্তু দ্বারা সু-সজ্জিত । যখন আমাদের চিন্তা-ভাবনা, ধ্যানজ্ঞান, কাজকর্মসহ প্রতিটা পদক্ষেপ হবে চূড়ান্ত লক্ষ্য মানে জান্নাতকে সামনে রেখে তখন আমাদের মাঝে এক অদৃশ্য সুখানুভূতি কাজ করতে থাকবে । আমাদের মাসব্যাপী, বছরব্যাপী কোন লক্ষ্য থাকতেই পারে তবে সব কাজের উর্ধ্বে আমাদের মনে যখন জান্নাত পাওয়ার আশা দোলা দিতে থাকবে তখন সুখানুভূতি হবে পরিতৃপ্ত এবং স্থায়ী । আর এ অবস্থায় কারো দ্বারা হবে না মানবজাতির কোন ক্ষতি । হবে না দুর্নীতি, কর্তব্যের প্রতি বিন্দু পরিমাণ অবহেলা । কেননা তাহলে যে সর্ব সুখের বাসনা হাসিলের পথে প্রভাব পড়বে । কারো মধ্যে হতাশা কাজ করবে না, কারণ সে তো আসল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে । একাধিক গবেষণা বলছে পৃথিবীর যত অপরাধ তার অধিকাংশই ঘটে চূড়ান্ত লক্ষ্যবিহীন ও হতাশাগ্রস্থ মানুষের দ্বারা । সুতরাং পৃথিবীর এ জীবনে হতাশামুক্ত থেকে এহকালের মানসিক প্রশান্তি, অপরাধমুক্ত সমাজ ও পরকালের চির-স্থায়ী সূখের জন্য সকলেরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকা উচিত এবং সেটা জান্নাত ।
মোঃ আলমগীর
হোসেন
সিনিয়র
লেকচারার,
কম্পিউটার
বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ
প্রাইম
বিশ্ববিদ্যালয় ।।
No comments:
Post a Comment