কেমন ভাবনায় শুরু হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন!!


      কেমন ভাবনায় শুরু হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন!!

- আলমগীর হসেন 

 

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন ছাত্র/ছাত্রী জীবন, জীবিকা বাস্তবতার শিক্ষা পেতে শুরু করে এইসএসসির গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেই তাইতো বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকতে হলে, সব গুণের মধ্যে প্রথমেই যেটা থাকতে হয় সেটা হলো শেখার অদম্য ইচ্ছা আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড একবার বলেছিলেন, কোন মানুষকেই কিছু শেখানো সম্ভব না সত্যিই, কোন মানুষকে কিছুই শেখানো সম্ভব না,  যদি না সে শিখতে চাই   আবার কোন মানুষই গুরুত্বপূর্ণ এবং স্মরণীয় কিছু করতে পারে না, যদি না তার সুদূরপ্রসারী ভিশন থাকে কথাটা যেমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনি প্রযোজ্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রতিযোগিতার এই যুগে টিকে থাকতে হলে শেখার যেমন তীব্র ইচ্ছা থাকতে হবে, তেমনি নিজের ভিশনের প্রতিটি স্তরের বাস্তবায়ন করার জন্য যথেচ্ছ পরিশ্রম করতে হবে শুধু নিজের সপ্নের বাস্তবায়ন করলেই হবে না জীবনের প্রতিটি ধাপে, প্রতিটি সমস্যার সমাধানে সময়োপযোগী কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার শিক্ষাও নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা থেকে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট . জন. জি. হিবেন বলেছিলেনশিক্ষা মানে জীবনের পরিস্থিতির মোকাবেলা করার ক্ষমতা নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রকৃতির প্রতিটি প্রান্তের বিষয়বস্তু থেকে নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে হবে প্রতি ক্ষণে নিজের জীবনের লক্ষ্যে অটল থেকে মৃদু বিছানায় নিজেকে আচ্ছাদন করার আগেই প্রতিদিনের কার্যপরিধির শতভাগ পূরণ হলো কিনা সেই হিসাবটা নিতে হবে বাকিরা যতটুকু শিখলো, সেটুকু শেখার পরে নতুন কিছু শিখলেই অন্যদের থেকে আপনি এগিয়ে থাকবেন দলভিত্তিক যত কাজ হয়, সেখানে একজনই নিজে দায়িত্ব নিয়ে সেই কাজটা সম্পন্ন করে সেই একজন হতে হবে, অর্জন করতে হবে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি

 

মানুষের দ্বারা কখনো একা যেমনটা বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, তেমনি  সম্ভব নয় অন্ধকারে আচ্ছন্ন সমাজ   শৃঙ্খলাহীন রাষ্ট্রে বসবাস করা আর তার জন্য শক্তিশালী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষের কোন বিকল্প নেই চলমান জীবন  ব্যবস্থায় সকল কিছুর ঊর্ধ্বে যেয়ে সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলার মতো মানসিকতা তৈরী করতে হবে আল্লামা ইকবালের মতেজীবন দর্শনের নিগূঢ় অর্থ, আত্মপ্রতিষ্ঠা ব্যক্তিত্বের বিকাশ মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গাতে, যেখানে নতুন নতুন জ্ঞানের উদ্ভব হয় সেখানে পড়ুয়া কোন মানুষ বা পড়া শেষ করা কেউ ব্যক্তিত্বহীন হতে পারে না কেননা ব্যক্তিত্বহীনতা আর মৃত্যুর মধ্যে কোন পার্থক্য থাকতে পারে না ব্যক্তিত্বহীন মানুষেরা নিজের স্বার্থের বাইরে কিছু করতে পারে না তারা যেমন হতে পারে অন্যের বিরক্তির কারণ, তেমনি তারা কখনো সমাজের বা রাষ্ট্রের উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে না চার্লস এম. স্কয়ার বলেছেন মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুলের সৌরভের মতো নিজের মেধা আর ব্যক্তিত্বের সৌরভ দিয়ে অমানিশা অন্ধকার কাটিয়ে দেওয়ার মনোভাব তৈরী করতে হবে   সমাজের বিনির্মাণে এবং নিজের আত্মসুখের জন্য এখন থেকেই নিজের ব্যক্তিত্বকে শক্তিশালী করার শিক্ষাটাও নিতে হবে হতে হবে একজন যোগ্য এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ

 

মানুষের মস্তিস্কের একটি অতি সাধারণ প্রবণতা হলো, সে সবসময় সাধারণ বিষয়গুলো জানতে চাই বা সেগুলো নিয়েই থাকতে চাই কিন্তু গতানুগতিকের বাইরে না গেলে তো আপনি অন্যদের থেকে যেমন আলাদা হতে পারবেন না, তেমনি এগিয়েও থাকবেন না মস্তিষ্কের সর্বাধিক ব্যবহার করা শিখতে হবে এবং তাকে সর্বদা উদ্ভাবনী সব কাজের সাথে সম্পৃক্ত রাখতে হবে আবার মানুষের একটি সর্বজনীন প্রবৃত্তি হলো, সে আশাপাশের মানুষগুলো দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয় সুতরাং স্বপ্ন পূরণের যাত্রায় এমন কারও সহচর্যে আসা যাবে না, যে আপনাকে একধাপ পিছিয়ে দিতে পারে, বা আপনার স্বপ্নের পরিবর্তন করে দিতে পারে   কেননা, অনেকদূরে যেয়ে ফিরে এসে আবার শুরু করা বা নতুন করে শুরু করাটা হবে অনেক বেশি পরিশ্রমের এবং হতাশার

 

যেকোন বিষয়ে ভিন্ন শ্রেনীর মানুষের ভিন্ন মতামত থাকবে এটাই স্বাভাবিক মানুষে মানুষে সহমর্মিতার অভাবের অন্যতম কারণ, অন্যের মতামতের অবমূল্যায়ন মনে রাখতে হবে, অন্যের ভিন্নধর্মী মতামতের অবশ্যই কোন না কোন প্রেক্ষাপট থাকে, প্রতিটি অবস্থানের মানুষের অবশ্যই কোন না কোন গল্প থাকে সুতরাং, অন্যের অবস্থানে নিজেকে বসিয়ে, দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এনে সকলের মতামত এবং অবস্থানকে যথাপোযুক্ত মূল্যায়ন করতে হবে আর এই অনুশীলনটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গা থেকেই শুরু করা শিখতে হবে কোন জিনিস কতটা সত্য, কতটা ন্যায়পূর্ণ, কতটা শুদ্ধ, ব্যক্তি বিশেষে কতটা প্রিয় বা অপ্রিয় তার সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা এবং যাচাই করে দেওয়া শিখতে হবে কেননা খারাপ চিন্তার ফলাফল সবসময় খারাপই হয় কোন মানুষের একটা দিন কতটা ভাল যাবে সেটা অনেকাংশে নির্ভর করে সে কতটা ইতিবাচকভাবে অন্যকে মূল্যায়ন করতে পারে সুতরাং, এই মনোভাবটাও এখন থেকেই তৈরী করতে হবে যেটা নেতিবাচকতা থেকে বের করে দিনশেষে আত্মতৃপ্তি, সুস্বাস্থ, শান্তি এবং সুখের সমারোহ সরবারহ করতে পারে

 

পৃথিবী বিখ্যাত লেখক ডা. জোসেফ মর্ফী বলেছেন, আপনি ভেতরে যেটা লালন করবেন বাহিরে সেটারই বহিঃপ্রকাশ হবে সুতরাং, ভেতরে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবার তাড়না সেটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ভিন্নধর্মী প্রচেষ্টাই কাউকে যেমন পরিপূর্ণ মানুষ করে তুলবে তেমনি জীবনে এনে দিবে প্রাচুর্যপূর্ণ সার্থকতা দিনশেষে জীবনটা আপনার, আর আপনাকেই রঙিনময় করে সাঁজাতে হবে যেমনভাবে নিজেকে আপনি ভবিষ্যতে দেখতে চান। আর এই প্রচেষ্টার শুরুটা করার উপযুক্ত সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার পর পরই । 



কেমন ভাবনায় শুরু হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু



2 comments:

  1. সুন্দর লেখনী।

    ReplyDelete
  2. Each and every sentences has deep meaning. Hope our students build their life following the given instructions. Best wishes for the writter.

    ReplyDelete